বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:৪৭ অপরাহ্ন
পাবনা প্রতিনিধিঃ পাবনার গণপূর্ত অফিসে আওয়ামী লীগ নেতাদের অস্ত্রের মহড়ার ঘটনায় জব্দকৃত অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করেছে পাবনার পুলিশ। মঙ্গলবার (১৫ জুন) দুপুরে পাবনা পুলিশ সুপার অফিসের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান এ কথা জানান।
তিনি বলেন, অন্যদের কথা বলতে পারব না তবে এ ঘটনায় পুলিশই একমাত্র যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছে। ঘটনার পরপরই আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় আমিই বিষয়টি উত্থাপন করি। পরবর্তীতে পাবনা সদর থানার ওসিকে বিষয়টি তদন্ত করে রিপোর্ট পেশ করতে বলি। তদন্ত করার পর পুলিশই অস্ত্র জব্দের ব্যবস্থা করে। এরপরই প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, থানায় জমাকৃত অস্ত্র ও ফুটেজে দেখতে পাওয়া অস্ত্রের মিল নিয়ে সন্দেহ থাকায় বিষয়টি নিয়ে আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। অনেকে একটি অস্ত্রকে হুজি অস্ত্র মনে করলেও সেটি আসলে শটগান ছিল।
পুলিশ সুপার আরও জানান, লাইসেন্স করা অস্ত্র ব্যবহারে বিভিন্ন শর্ত রয়েছে। পাবনার গণপূর্ত অফিসে অস্ত্র নিয়ে ঢোকার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট দুটি শর্ত ভঙ্গ হয়েছে। তাই অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।
পুলিশ জানায়, পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিলুপ্ত কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ফারুক হোসেন ও বিলুপ্ত পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ আর খান মামুন ও পাবনা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ লালু গত ৬ জুন দুপুর ১২টার দিকে সশস্ত্র অবস্থায় পাবনার গণপূর্ত অফিসে ঢুকে মহড়া দেন।
ঐ দিন অস্ত্র নিয়েই তারা কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষে ঢোকেন। ওই সময় তাদের সঙ্গীরা বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন। ১২টা ১২ মিনিটে তারা ফিরে যান। গত শনিবার (১২ জুন) সিসিটিভি ফুটেজে বিষয়টি ভাইরাল হলে সারা শহরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। অজ্ঞাত কারণে গণপূর্ত বিভাগ বিষয়টি ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে বলে বিভিন্ন সূত্র অভিযোগ করে।
পাবনার পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান আরও জানান, গণপূর্ত বিভাগ বিষয়টি নিয়ে কোনো অভিযোগ করেনি বা জানায়নি। ফেসবুকে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে পুলিশ নিজ উদ্যোগে কাজ করছে। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।
পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, পুলিশের তদন্ত রিপোর্ট বা অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশপত্র হাতে পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একটি সূত্র জানায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের আবাসিক প্রকল্প গ্রিন সিটিসহ নানা প্রকল্পে গণপূর্ত বিভাগের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার কাজ চলছে। এসব প্রকল্পের কাজের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে নিজেদের ক্ষমতাবান প্রমাণ করতেই এই মহড়া।
সূত্র আরও জানায়, গত ৩০ জানুয়ারি পাবনা পৌরসভার নির্বাচনে নৌকা ও নারিকেল গাছ মার্কা প্রতীকে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। ১২২ ভোটে নারিকেল গাছ মার্কা প্রতীক জয়লাভ করে। তারপর থেকেই নারিকেল গাছ মার্কার সমর্থকরা প্রতিটি অফিস আদালতে নিজেদের আধিপত্য প্রমাণ করতে এ ধরণের ঘটনা ঘটাচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, গণপূর্ত বিভাগের বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ারুল আজিম ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে নানা অপকর্ম করছেন। এ ঘটনায় তারও ইন্ধন থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এত বড় ঘটনার পরও চেপে যাওয়ায় নানা মহলে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।